রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

নাগরিক সংবর্ধনায় একুশে পদক-২০২২ ভূষিত  ডঃ জ্ঞানশ্রী মহাথেরোর অন্তিম ঘোষণা।

নাগরিক সংবর্ধনায় একুশে পদক-২০২২ ভূষিত ডঃ জ্ঞানশ্রী মহাথেরোর অন্তিম ঘোষণা।

ঋদ্ধিময় নিউজ ডেক্স-


আমি সমাজের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছি। সমাজের কল্যাণে ৩কোটি টাকার ট্রাস্ট করে যাচ্ছি। একুশে পদকে পাওয়া ৪ লক্ষ টাকাও আমি ট্রাস্টে দান করলাম। আমি মরার পর বেশী টাকা খরচ করবেন না। অল্প খরচে ৫/৬ দিনের মধ্যে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করবেন।

শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

নাগরিক সংবর্ধনা- ২১ এ সংবর্ধিত হচ্ছেন ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড.জ্ঞানশ্রী মহাথের।

নাগরিক সংবর্ধনা- ২১ এ সংবর্ধিত হচ্ছেন ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড.জ্ঞানশ্রী মহাথের।


ঋদ্ধিময় নিউজ ডেক্সঃ-



বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, মহামান্য ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড.জ্ঞানশ্রী মহাথের মহোদয় সমাজসেবায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের "একশে পদকে ভূষিত" হওয়ায় আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০২২ খ্রি. ২৫৬৫ বুদ্ধাব্দ, সোমবার, বিকেল ৫টার সময় বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের উদ্যোগে মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।
সম্মানিত দায়ক-দায়িকা, উপাসক-উপাসিকা এবং সুধিমণ্ডলী সকলকে উপর্যুক্ত সময়ের মধ্যে উপস্থিত হয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানাকে সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত করার আহব্বান।

স্থানঃ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, মেরুল বাড্ডা, ঢাকা।
তারিখঃ ২১শে ফেব্রুয়ারী ২০২২, সোমবার,  বিকেল ৫ টা।
রিপোর্ট-ভদন্ত_বুদ্ধানন্দ_মহাথেরো,প্রতিষ্ঠাতা উপাধ্যক্ষ ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার,প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সিনিয়র সহ-সভাপতি বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন।প্রতিষ্ঠাতা প্রধান উপদেষ্টা বৌদ্ধ শিশু-কিশোর মেলা, ঢাকা।

জয়িতা বড়ুয়া'র স্বর্ণপদক লাভ,

জয়িতা বড়ুয়া'র স্বর্ণপদক লাভ,

ঋদ্ধিময় নিউজ ডেস্কঃ-কক্সবাজার। 

বিশ্বে একসাথে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ পরীক্ষা "World Peace Ethics Contest-2021" -এ অংশগ্রহণ করে "Bangladesh 1ˢᵗ " হয়ে স্বর্ণপদক পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রামু ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজের কৃতি শিক্ষার্থী বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন এর আজীবন সদস্য লায়ন দুলাল বড়ুয়া  মেয়ে মিস জয়িতা বড়ুয়া

জয়িতা 'খ' গ্রুপ (৮ম শ্রেণী - ১০ম শ্রেণী) থেকে এ 
পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান লাভের গৌরব অর্জন করে।

সকলের কাছ থেকে জয়িতার জন্য আশীর্বাদ কামনা করছেন তার মা-বাবা। 


শাক্য বংশের পরিণতি-বাপ্পা গোস্বমী।

শাক্য বংশের পরিণতি-বাপ্পা গোস্বমী।

ঋদ্ধিময় বিষয়াবলি:

বুদ্ধদেব যে শাক্য বংশে জন্মগ্রহণ করেন তা ইক্ষ্বাকু বংশের একটি ধারা। ইক্ষ্বাকুর বিতাড়িত চার পুত্র ও কন্যা নেপাল সংলগ্ন কপিলাবস্তু তে রাজ্য স্থাপন করেন এবং শাক্য বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে শাক্য বংশের আয়তন বৃদ্ধি হলে তা বিভক্ত হয় এবং একটি অংশ রোহিনী নদীর অপর পাড়ে নতুন বসতি স্থাপন করে যার নাম ছিল দেবদহ। দেবদহের শাক্যরা কোলীয় শাক্য নামে পরিচিত হয়।শাক্য বংশে দুটি নিয়ম অত্যন্ত কঠোরভাবে পালিত হতো, এক পত্নী গ্রহণ এবং অন্তর্বিবাহ|

বুদ্ধদেবের পরিশীলিত মানসিক স্তর তাঁকে এই অন্তর্বিবাহের কঠিন পরিণতি সম্বন্ধে সচেতন করেছিল বলেই মনে হয়। তা না হলে কেনই বা তিনি অতি বলিষ্ঠ এবং রণনিপুণ শাক্যদের প্রায় সমস্ত যুবাগনকে তাঁর অহিংস ধর্মে ব্রতী করিয়ে সংঘমুখী করে তুলবেন? আনন্দ, মৌদগল্লায়ন, নন্দ এমনকি দেবদত্ত পর্যন্ত "সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি" কে তাঁদের মূলমন্ত্র করে ক্ষাত্রধর্ম বিসর্জন দিয়ে সংঘ গমন করেন।পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ন শাক্য জাতি শাক্যসিংহের অহিংস মন্ত্রকে তাদের অবশ্য কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং তা তাঁদের ধ্বংসের কারণ হয়।যেন পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পূর্ণ ঘটনা প্রবাহ চিত্রনাট্যে বর্ণিত নাটকের মত মঞ্চস্থ হয়|

এই ধ্বংসলীলা কিভাবে মঞ্চস্থ হয় তার দিকেই নজর ফেরানো যাক।কোশল রাজ প্রসেনজিৎ জীবনের এক পর্যায়ে এসে বুদ্ধদেবের চরণাশ্রিত হান। এক সময় তার বাসনা হয় যে বংশে এরূপ মহামানবের আবির্ভাব হয়েছে সেই বংশের একটি কন্যাকে কোশলের মহারানী করে আনার। এতে শাক্যরা প্রমাদ গোণেন কারন শাক্য বংশে কঠোরভাবে অন্তর্বিবাহ বলবত ছিল|এই বিপদ থেকে মুক্তিদানের উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেবের পিতৃব্য শুক্লোদনের পুত্র মহানাম এগিয়ে আসেন। মহানাম সেই সময়ে কপিলাবস্তুর সেনাপতি ছিলেন। মহানাম এর গৃহে তাঁর দাসীর গর্ভে তাঁর এক কন্যা ছিল। সেই কন্যার সাথে প্রসেনজিতের বিবাহ হয়। তাদের এক পুত্র ও এক কন্যা জন্মায়। পুত্রের নাম বিরূঢ়ক ও কন্যার নাম বজ্জিরা। বজ্জিরার সঙ্গে অজাতশত্রুর বিবাহ হয়। বিরূঢ়ক যখন মাতুলালয়ে ছিলেন তখন এক মহতী অনুষ্ঠান মঞ্চে খেলার ছলে তিনি উঠে পড়লে এক শাক্যবৃদ্ধ দ্বারা তিনি দাসীপুত্র বলে তিরস্কৃত হন। এর ফলে তিনি অত্যন্ত অপমানিত হন এবং তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে তিনি শাক্য বংশ ধ্বংস করবেন। সেই জন্য কোশলের রাজ সিংহাসন দখল করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। তিনি কোশল রাজপুরোহিত পুত্র অম্বরীষ এবং সেনাপতি দীর্ঘকারায়নের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। প্রসেনজিৎ বুদ্ধচরনবন্দনা করে শ্রাবস্তী ফেরার পথে বিরূঢ়কের সিংহাসন অধিকারের খবর পান এবং সাহায্য প্রার্থনাহেতু মগধ উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন| কিন্তু পৌঁছতে রাত্রি হওয়ায় তিনি রাজগৃহে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন এবং বিফল মনোরথে নগরদ্বারের বাইরে প্রাণ ত্যাগ করেন|

বিরূঢ়ক ও শাক্যবংশীয়দের চরিত্র বর্ণনা এই প্রবন্ধে জরুরী। বিরূঢ়ক রাজপুত্র হিসেবে তৎকালীন ভারতবর্ষের অন্যতম শক্তিশালী নগর কোশলে জন্মগ্রহণ করেন। রাজকুমারোচিত স্বভাব তার পক্ষে অতি স্বাভাবিক ছিল। ক্ষত্রিয়জনোচিত শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে শাক্য রাজধানী কপিলাবস্তু তে প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি। তৎকালীন আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই কোনো রাজপুরুষের সঙ্গে কোনো দাসী বা দাসীগর্ভজাত মহিলার বিবাহ সম্ভব ছিলনা। কিন্তু শাক্যগন এই নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন তাঁর পিতার ক্ষেত্রে এবং তাও বিরূঢ়কের পিতার অজ্ঞাতসারে। বিরূঢ়ক আবশ্যিকভাবেই এই ঘটনাকে তার জন্য অপমানজনক হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া ললিতবিস্তারে কোশল রাজবংশ কে মাতঙ্গচ্যুতি অর্থাৎ মাতঙ্গ নামক কোন হীন জাতি থেকে উৎপন্ন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।এই সমস্ত কিছুই বিরূঢ়কের সম্মানহানিকর এবং তাঁকে ক্রোধোন্মত্ত করে তোলার পেছনে ইন্ধন হিসেবে কাজ করেছিল।

অন্যদিকে শাক্য বংশের নেতৃস্থানীয়দের কিছু ক্রিয়া-কলাপ ও সমালোচিত হওয়ার যোগ্য। যে বংশের পরমপুরুষ আচার সর্বস্ব ও ব্যয়বহুল যাগ-যজ্ঞ নিষিদ্ধ করার মহাযজ্ঞে নেমেছিলেন এবং বর্ণভেদ প্রথা ও লিঙ্গবৈষম্যকে নির্মূল করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং সেই কারণে যিনি দস্যু, দেহোপজীবিনী সকলকে নিজ শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করে তৎকালের অচলায়তনের মূলে কুঠারাঘাত করেছিলেন সেই বংশের নেতৃস্থানীয় এক বয়োঃবৃদ্ধের পক্ষে একটি বালক কে দাসীপুত্র হিসেবে ভর্ৎসনা করা কিছুটা আশ্চর্য জনক ই বটে। শাক্যরা সেই সময়ে কিন্তু স্বাধীন রাজবংশ হিসেবে রাজত্ব করতেন না| বুদ্ধদেব যখন প্রব্রজ্যা গ্রহণ করেন এবং রাজগৃহে আসেন তখন বিম্বিসারের কাছে নিজ পরিচয় দিয়েছিলেন এইভাবে,

উজুং জনপদোরাজা হিমবন্তসস পসসত|

ধনবিবিষেন সম্পন্নো কোসোলেস নিকেতন||

আদিচ্চা নাম গোত্তেন সাকিয়া নাম জাতিয়া|

তমহা কুলা পব্বাজতোমহি রাজন কামে অভিপল্মযং|| সুত্তনিপাত|

"হে রাজা এখানে সম্মুখস্থ হিমালয়ের পাদদেশে কোশল রাজ্যে একটি ছোট জনপদ আছে তাহার অধিবাসীদের গোত্র আদিত্য এবং জাতি শাক্য।হে রাজা আমি এই বংশে জন্মেছি এবং এখন কাম ভোগের ইচ্ছা ছাড়িয়া সন্ন্যাসী হইয়াছি।"- তথ্যসূত্র; ভগবান বুদ্ধ, ডি. কোশাম্বী|

অর্থাৎ এই সময় শাক্যরা কোশলরাজবংশের অধীনে থেকে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতেন এবং নিজেদের শাসন ব্যবস্থা নিজেরা পরিচালনা করতেন। এই শাক্যদের কোশল রাজবংশের সঙ্গে বিবাহ সম্পর্কিত ছলনা বিধিবহির্ভূত কাজ হয়েছিল বলে বুদ্ধদেবের মনে হয়েছিল। এবং এর কর্মফল ভোগ শাক্যগোত্রীয়দের করতেই হবে এরূপ ভবিষ্যৎবাণী বুদ্ধদেবের মুখে শোনা যায়। কর্মফল ভোগের ঘটনাটি জাতকের কাহিনী রূপেও শাক্য সিংহের মুখে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটি নিম্নরূপ-

বুদ্ধদেব একসময় শিরঃপীড়ায় প্রায় তিন দিনের জন্য কাতর হলে শিষ্যরা এর কারণ জানতে চান। উত্তরে বুদ্ধদেব জানান কপিলাবস্তুর পাশে পুরাকালে এক বৃহৎ জলাশয় ছিল| একসময় প্রচন্ড খরা হয় এবং সেই জলাশয়ের মাছ গুলি কপিলাবস্তু অধিবাসীরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। শেষ মাছটি একটি বৃহৎ মাছ ছিল যেটিকে খাওয়ার আগে একটি শিশু মাছটির মাথায় তিনবার আঘাত করে। এই মাছটি পূর্ব জন্মে ছিলেন বিরূঢ়ক এবং ছোট মাছগুলো তাঁর সৈন্য ছিল এবং তাদের যারা মেরে খেয়ে ছিলেন তারা শাক্য বংশীয় মানুষ ছিলেন এবং শিশুটি ছিলেন বুদ্ধদেব স্বয়ং।এই কর্মের ফলে তিনি তিনদিন শিরঃপীড়ায় কাতর হয়েছেন।অর্থাৎ কর্মফল সবাইকেই ভোগ করতে হয় তাই বিরূঢ়কের হাতে শাক্য বংশের ধ্বংস হওয়া সময়ের অপেক্ষা এবং তা কর্মফল ই, এই ঘোষণা শাক্য সিংহ কে করতে হয়েছিল।

বিরূঢ়কের মানসিক গঠন এবং মানসপটে শাক্যবৈরিতার যে বিষবৃক্ষের বীজ ঊপ্ত হয়েছিল তার পেছনে কোশলনরেশ প্রসেনজিতের দায় অনেকখানি।প্রসেনজিতের কানপাতলা স্বভাব এবং অগভীর মানসিকতা এক অনভিপ্রেত ঘটনাপ্রবাহের জন্ম দেয়।

বুদ্ধদেবের শ্রাবস্তী অবস্থানকালে 500 ভিক্ষু প্রত্যেকদিন অনাথপিণ্ডক ও বিশাখার গৃহে ভিক্ষান্ন গ্রহণ করতেন। প্রসেনজিৎ বুদ্ধদেবের কাছে প্রার্থনা করেন যেন 500 ভিক্ষু প্রত্যেকদিন রাজপ্রাসাদেও অন্নগ্রহণ করেন। বুদ্ধদেব তাতে রাজিও হন। কিন্তু অনাথপিণ্ডক বা বিশাখা গৃহে যে শ্রদ্ধাসহ ভিক্ষান্ন প্রদত্ত হতো রাজপ্রাসাদে তা হতো না।কোশলনরেশের পক্ষে তার তদারকি করা সম্ভব হতো না, অন্যদিকে মহারানীরা এই কাজে আগ্রহী ছিলেন না। কোন একদিন কোশলনরেশ কিছু রসযুক্ত সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্য ভিক্ষুদের জন্য খাদ্যগ্রহণের নির্দিষ্ট স্থানে পাঠালে পরিচারক ফিরে এসে জানায় ভিক্ষুরা অন্নগ্রহণ নিমিত্ত সেখানে আসেননি।মহারাজ বুদ্ধদেবের কাছে এর সম্বন্ধে অনুযোগ করতঃ ভিক্ষুরা কেন আসছেন না তা জানতে চাইলে বুদ্ধদেব জানান ভিক্ষুরা শ্রদ্ধাসহ প্রদত্ত ভিক্ষান্ন যেখানে পান সেখানে তা গ্রহণ করেন। কারা সেই শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন তা জানতে চাইলে বুদ্ধদেব জানান সজ্ঞাতি বা শাক্যরা এই কাজ অত্যন্ত সুচারুভাবে করে। এমত পরিস্থিতিতে প্রসেনজিৎ একজন শাক্য রাজকুমারীকে বিবাহেচ্ছা ব্যক্ত করেন। এর পেছনে অবশ্য আরেকটি কারণ ও থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট। শাক্যরা কোশলনরেশের অধঃস্তন হলেও তারা বংশগৌরবে উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন ছিলেন।এবং তৎকালীন নিয়ম অনুযায়ী প্রসেনজিৎ এই কুলের একজনকে প্রধানা মহিষী করে তার পুত্রকে পরবর্তী রাজা করার বাসনা পোষণ করতেন যাতে তাঁর বংশ ও উচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়।


            এরপরে প্রসেনজিতের দূত শাক্যরাজদরবারে প্রসেনজিতের প্রস্তাব পেশ করেন। শুদ্ধোদন তখনও শাক্য কুলপতি এবং মহানাম সেনাপতি। আগেই বলা হয়েছে শাক্যরা অন্তর্বিবাহ কঠোরভাবে মেনে চলতেন আবার একই সাথে কোশলনরেশের বাসনার বিরোধিতা করাও তাঁদের পক্ষে প্রকাশ্যে সম্ভব ছিল না কারণ এর বিষময় ফল তাঁরা কয়েকবার প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ফলে মহানামের কুবুদ্ধির আশ্রয় নেওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় ছিল না। মহানামের গৃহে তার ঔরসে নাগমুন্ডা নামক এক দাসীর গর্ভে তাঁর এক কন্যা ছিল। তার নাম বাসবক্ষত্রিয়া।তাকে রাজকুমারী পরিচয়ে কোশলনরেশ এর সঙ্গে পরিণয় এর ইচ্ছা প্রকাশ করে প্রসেনজিতের দূতকে জ্ঞাত করা হয়।তিনি প্রকৃত রাজকন্যা কিনা তা জানার উদ্দেশ্যে দূতের তরফে একটি প্রার্থনা শাক্যকুলপতির উদ্দেশ্যে পেশ করা হয় যে বাসবক্ষত্রিয়া শাক্যদের সঙ্গে একই পাত্র থেকে অন্নগ্রহণ করছেন এরকম একটি ভোজসভায় যেন তাঁকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়। আবার মহানাম মঞ্চে অবতীর্ণ হন। তিনি জানান যে তাঁকে আর বাসবক্ষত্রিয়াকে যেন একই পাত্রে খাদ্য দেয়া হয় । তিনি প্রথম খাদ্যগ্রাস গ্রহনের পরে যেন বাসবক্ষত্রিয়াকে সেখানে আনা হয়। তারপরে অন্ন যেন বাসবক্ষত্রিয়া গ্রহণ করেন এবং সেই সময় মহানামকে যেন কোন জনৈক রাজার কাল্পনিক অতি জরুরী পত্র পাঠ করার অনুরোধ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নাটক মঞ্চস্থ হয়।মহানাম সেই কাল্পনিক জরুরী পত্রে এতটাই মনোনিবেশ করেন যে বাসবক্ষত্রিয়ার খাদ্যগ্রহণ শেষ হয় এবং কোশলদূতের মনে রাজকন্যার পরিচয় সম্পর্কিত সন্দেহ সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়। এরপর কোশলনরেশ বাসবক্ষত্রিয়াকে বিবাহ করে তাকে অগ্রমহিষীর স্থান দেন। যথাকালে এক পুত্র এবং এক কন্যা প্রসেনজিতের ঔরসে তাঁর গর্ভে জন্ম নেয়। কোশলনরেশ পুত্রের নামকরনের জন্য তার পিতামহীর কাছে এক বধির আমাত্যকে পাঠালে রাজপিতামহী বলেন পুত্রের জন্মের পরে তো বাসবক্ষত্রিয়া আরো বল্লভা অর্থাৎ মহারাজের প্রিয়া হবেন। বধির আমাত্য এই বল্লভা কে বিরূঢ়ক শোনেন এবং রাজপুত্রের নামকরণ হয় বিরূঢ়ক। এরপরের অল্প কিছু অংশ পূর্ববর্তী অংশে জানানো হয়েছে। বিরূঢ়ক কয়েকবার মাতুলালয়ে যাওয়ার বাসনা প্রকাশ করার পরে তাঁর 16 বছর বয়সে তাঁকে মাতুলালয়ে পাঠানো হয়। সেখানেই তার মঞ্চে উঠে পড়ার ঘটনা, সেখানের একটি উচ্চাসনে বসার ঘটনা এবং দাসীপুত্র রূপে তিরস্কৃত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাঁর বয়স্য অম্বরীষ দাসীপুত্র বক্তব্যের মর্মার্থ উদ্ধারে সমর্থ হয় এবং এই সত্য শ্রাবস্তী রাজপ্রাসাদে উন্মোচন করে। বিরূঢ়কের রাজকুমারোচিত মন এতে অভিমানাহত হয় এবং যে উচ্চাসন তার বসার কারণে দুগ্ধধৌত করার প্রয়োজন হয়েছিল তাকে শাক্যরক্তে ধৌত করার পণ নিয়ে তিনি ফিরে আসেন।সম্পূর্ণ ঘটনা রাজার কর্ণগোচর হলে রাজা বাসবক্ষত্রিয়া এবং বিরূঢ়কের প্রাপ্ত সমস্ত সুবিধা প্রত্যাহার করে তাদের শুধুমাত্র দাসদের প্রদত্ত সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দেন। এর কিছু পরে বুদ্ধদেব- শ্রাবস্তী এলে প্রসেনজিৎ তার সঙ্গে ঘটা ছলনার কথা এবং তৎপরবর্তী কালে বাসবক্ষত্রিয়া ও বিরূঢ়ক কে প্রদত্ত অগ্রমহিষী ও যুবরাজপদ প্রত্যাহারের ঘটনা নিবেদন করেন।বুদ্ধদেব এই ছলনার নিন্দা করলেও কাষ্ঠহারী জাতকের কাহিনী বলে কাষ্ঠবাহন রাজার কাঠকুড়ুনির ছেলে হয়েও রাজার ঔরসে জন্মগ্রহন করায় অর্থাৎ পিতৃপরিচয়ে বারানসীরাজ হয়েছিলেন সেই ঘটনা ব্যক্ত করেন এবং বাসবক্ষত্রিয়া ও বিরূঢ়ক দুজনই পিতৃপরিচয়ে ক্ষত্রিয়বংশজাত এবং তাদের প্রাপ্ত সমস্ত সুবিধাই যে তারা ভোগ করার অধিকারী এই বিধান দিলে বাসবক্ষত্রিয়া ও বিরূঢ়কের হৃতমর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই মর্যাদাহরন নিশ্চিতভাবে বিরূঢ়কের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল যা পরিণতি পায় শাক্য বংশের বিলোপসাধনে।|

প্রসেনজিৎ কৃত আরেকটি ঘটনা তাঁর সিংহাসনচ্যুতি এবং পরিনতি স্বরূপ বিরূঢ়কের সিংহাসনপ্রাপ্তি এবং তাঁর প্রতিজ্ঞাস্বরূপ শাক্যদের চরমপরিণতির কারণ। কোশল রাজকুমার প্রসেনজিৎ, মল্লবীর বন্ধুলমল্ল এবং লিচ্ছবীবীর মহালি(মহালিচ্ছবী) একই সঙ্গে তক্ষশীলায় শিক্ষাগ্রহণান্তে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনপূর্বক তাঁদের অধীত বিদ্যা প্রদর্শনেআগ্রহী হন নিজের রাজ্যে।প্রসেনজিৎ এবং মহালি কোন বিরূপতা ছাড়াই অত্যন্ত কুশলতার সঙ্গে অস্ত্রবিদ্যা প্রদর্শন করেন কিন্তু মল্লদের ক্ষেত্রে একটি ঘটনা ঘটে।বন্ধুলমল্ল তাঁর তরবারির শৌর্য্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ষাটটি মাস বাঁশের দন্ড একসঙ্গে বেঁধে এক তরবারির আঘাতে সম্পূর্ণ দ্বিখণ্ডিত করে দেখাবার প্রয়াস পান।কোন শত্রুভাবাপন্ন মল্লকুমার একটি বাঁশের দন্ডের ভেতরে লোহার দন্ড প্রবেশ করিয়ে রাখে।এরপর বন্ধুলমল্ল যদিও সেই একত্রীভূত বংশদন্ড স্তূপকে দ্বিখন্ডিত করেন কিন্তু সেই ধাতবশব্দ শুনে তিনি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পান এবং মল্লভূমি ত্যাগ করে মিত্র প্রসেনজিতের আশ্রয়গ্রহন করেন| তিনি শ্রাবস্তীতে বসবাস করতে থাকেন এবং প্রসেনজিতের প্রধান সহায় হন।কোনভাবেই এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বন্ধুলমল্লর মহাপ্রতাপ কোশল রাজ্যকে মহাশক্তিশালী করার প্রধানতম অবলম্বন ছিল। বন্ধুলমল্লর স্ত্রী অপুত্রক থাকায় তিনি তাকে পিতৃগৃহে প্রেরণ করেন।তাঁর স্ত্রী মল্লিকা সম্পূর্ণ ঘটনা বুদ্ধের নিকট নিবেদন করলে বুদ্ধদেব তাঁকে পতিগৃহে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরে মল্লিকা সন্তানসম্ভবা হন।এই অবস্থায় তার লিচ্ছবী গণরাজ্যের অভিষেক পুষ্করিণীর জলপান ও সেখানে অবগাহনের ইচ্ছে হলে বন্ধুল সেই ইচ্ছা পূরণে উদ্যোগী হন। লিচ্ছবীরা বাধা দিলে সেই বাধা বাহুবলে দূর করেন।বন্ধুলের প্রত্যাগমন কালে ৫০০ লিচ্ছবী রাজপুরুষ তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মহালির আদেশ প্রার্থনা করলে মহালি তাঁদের এই কাজ করতে নিষেধ করেন।কিন্তু সেই নিষেধ মানতে রাজি না হওয়ায় মহালি লিচ্ছবীদের নির্দেশ দেন যদি কোন রথচক্র অর্ধপ্রোথিত অবস্থায় তাঁরা দেখেন সেখান থেকে তাঁরা যেন প্রত্যাগমন করেন| এরপরেও অগ্রসর হলে যেখানে বজ্রনাদ শুনবেন সেখান থেকে যেন প্রত্যাগমন করেন এবং তার পরেও যদি অগ্রসর হন তবে যেখানে তাঁদের রথের শীর্ষদেশ তিরবিদ্ধ হবে সেখান থেকে যেন অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করেন নচেৎ মৃত্যু অনিবার্য। পশ্চাদ্ধাবনকালে বন্ধুল পাঁচশ লিচ্ছবী রাজপুরুষকে বাধাদানের উদ্দেশ্যে তাঁর ধনুতে জ্যা রোপন করলে তার রথচক্র অর্ধেক ভূপ্রবিষ্ট হয়।পরবর্তীতে তিনি ধনুতে টংকার করলে তা বজ্রনাদের ধ্বনি সৃষ্টি করে এর পরেও লিচ্ছবীরা অগ্রসর হলে তিনি তাঁদের রথশীর্ষ কর্তন করেন।তবুও লিচ্ছবীরা তাঁকে অনুসরণ করলে তিনি একই তীরে ৫০০ লিচ্ছবীর কটিবন্ধের স্থান বিদ্ধ করে প্রত্যেককে দ্বিখণ্ডিত করেন। এ হয়তো অতিকথন কিন্তু তাঁর শারীরিক বলের পরাক্রম ব্যক্ত করতেই এত রূপকের আমদানি। বন্ধুলমল্ল প্রসেনজিতের পরমসহায় ছিলেন।লিচ্ছবী রাজপুরুষদের দমনের পরে তার ৩২ টি পুত্র হয় তাঁরাও বন্ধুলের সমমানের যোদ্ধা ছিলেন। বন্ধুলমল্ল অত্যন্ত ন্যায়পরায়ন মানুষ ছিলেন। ন্যায়ালয়ের অনৈতিক কাজকর্ম প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে বন্ধ করায় প্রসেনজিৎ তাঁকে প্রধান সেনাপতির সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিচারপতি পদেও অভিষিক্ত করেন। তিনি প্রসেনজিতের বয়স্য ছিলেন সুতরাং তাঁদের সম্পর্ক রাজা ও সেনাপতির সম্পর্কের বাইরেও বন্ধুত্বের ও ছিল। তার জেরে বন্ধুলমল্ল কোশলনরেশকে পরিহাসে বিদ্ধ করতেও সংকুচিত হতেন না। যারা বন্ধুলের উন্নতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল তারা কোশলনরেশের মনকে বন্ধুলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন করে তুলতে বিশেষ প্রযত্ন নেয়।তারা প্রসেনজিতের অগভীর মানসিকতা সম্পর্কে সচেতন ছিল এবং তাঁকে এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী করে তুলতে সক্ষম হয় যে বন্ধুল তাঁর ৩২ পুত্রসহ রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং শীঘ্রই রাজসিংহাসন দখল করবেন।প্রসেনজিতের পক্ষে বন্ধুলের বিরুদ্ধে প্রমাণহীন অবস্থায় প্রকাশ্যে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব ছিল না কারণ বন্ধুল নাগরিক মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। প্রসেনজিৎ সপুত্রক বন্ধুলকে প্রত্যন্ত প্রদেশে দস্যুদমন উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। এঁদের পেছনে তিনি গুপ্তঘাতক প্রেরণ করেন। বন্ধুল শান্তিপ্রতিষ্ঠা করে শ্রাবস্তী প্রত্যাবর্তনের পথে সপুত্রক গুপ্তঘাতকের হাতে নিহত হন।তাঁর এবং তার ৩২ পুত্রের মস্তক প্রসেনজিতের কাছে প্রেরিত হয়। পরে প্রসেনজিৎ এহেন ভুল সম্যকভাবে উপলব্ধি করেন| তিনি বন্ধুলপত্নী এবং তাঁর পুত্রবধূদের নিজ নিজ পিত্রালয়ে প্রেরণ করেন এবং বন্ধুলের ভাগ্নে দীর্ঘকারায়নকে সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। দীর্ঘকারায়ন কিন্তু এই পদ লাভের উৎকোচের বিনিময়ে নিজ জ্ঞাতির রক্তপাত সহজভাবে গ্রহণ করেননি। তিনি বন্ধুলের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন এবং এই মাতুল হত্যার প্রতিশোধগ্রহণের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। সেই সময়ে বুদ্ধ সন্দর্শনে কোনরকম রাজঅভিজ্ঞা গ্রহণ করে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। বন্ধুলহত্যার পরে প্রসেনজিৎ প্রকৃতই অনুতপ্ত ছিলেন এবং মানসিক শান্তি প্রাপ্তির অভিলাষে তিনি বাসবক্ষত্রিয়া ও দীর্ঘকারায়নসহ বুদ্ধ দর্শনাভিলাষে জেতবনে যান। তিনি পঞ্চঅভিজ্ঞা যথা তরবারি, মুকুট, ছত্র, ব্যজন ও পাদুকা দীর্ঘকারায়নের হস্তে সমর্পণ করে বুদ্ধ পদতলে বসেন। এই সময় দীর্ঘকারায়ন তাঁর জন্য একটিমাত্র দাসী রেখে বাকি দাসদাসী ও পঞ্চরাজঅভিজ্ঞা সহ রাজধানী ফিরে যান।তিনি ইতিমধ্যেই বিরূঢ়ককে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত করাতে সক্ষম হয়েছিলেন এই বলে যে রাজসিংহাসনে বসলে তাঁর পক্ষে শাক্যবংশ লোপের প্রতিজ্ঞাপূরণ করা অতি সহজ হবে।ফলে রাজধানী প্রত্যাবর্তন করে দীর্ঘকারায়ন বিরূঢ়ককে রাজসিংহাসনে অভিষিক্ত করেন এবং শাক্যকুল ধ্বংসের প্রথম পদক্ষেপটি সম্পূর্ণ হয়।

শাক্যদের পরিণতি বর্ণনার শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছানো গেছে। দীর্ঘকারায়ন বিরূঢ়ক কে সিংহাসনে অভিষিক্ত করে তাঁর মাথায় শ্বেতছত্র ধরে তাকে শ্রাবস্তীর রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসেন এবং আমাত্যকুল তাঁকে কোশলনরেশ হিসেবে গ্রহণ করেন। সিংহাসনে বসে বিরূঢ়ক তার প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠেন। তিনি তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে কপিলাবস্তু উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য শাক্যরক্তে তাঁর সিংহাসন ধৌত করে তাঁর অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণ। এই তথ্য বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘে পৌঁছালে সেখানে দুঃখ মিশ্রিত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বুদ্ধ তখন জেতবনে অবস্থান করছিলেন।যেহেতু শাক্য রাজপুরুষেরা প্রায় সবাই তখন ভিক্ষুসংঘের সদস্য তাই তাদের স্বজাতিকে রক্ষা করার বাসনা প্রকাশিত হয় বুদ্ধসকাশে। মহামৌদগল্লায়ন বিশেষভাবে এই অভিযান বন্ধ করার জন্য বুদ্ধদেবকে অনুরোধ করেন। যেদিন বিরূঢ়ক তাঁর সেনা সমাভিব্যাহারে কপিলাবস্তু অভিযানে বের হন সেদিন সকালে বুদ্ধদেব তাঁর দিব্যদৃষ্টিতে সৃষ্টি অবলোকন করছিলেন। তিনি সেই অভিযানোদ্যত সেনাকে অবলোকন করেন। এরপরে তিনি মাধুকরী সমাপন করে ভিক্ষান্ন গ্রহণ সমাপনান্তে মধ্যাহ্নে গন্ধকুঠিতে সিংহশয়ানে বিশ্রাম করেন। এরপর অপরাহ্নে দৈবক্ষমতাবলে কোশল ও কপিলাবস্তু সীমান্তবর্তী স্থানে যেখানে তখন ও বিরূঢ়কের সৈন্য এসে পৌঁছায়নি সেখানে উপস্থিত হন।সেখানে কোশল ভূ ভাগে একটি ছায়াপ্রদানকারী বটগাছ এবং কপিলাবস্তু ভূভাগে একটি শাখাসর্বস্ব এবং পত্র ও ছায়াবিহীন গাছ ছিল। অপরাহ্নের রোদ তখনো অপসৃত হয়নি। বুদ্ধদেব ছায়াবিহীন গাছটির নিচে পদ্মাসনে উপবিষ্ট হন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিরূঢ়ক সৈন্যসহ এখানে উপস্থিত হন। এই ঘটনা মহাপরিনির্বাণ এর এক বছর আগের।তখন বুদ্ধদেব এতটাই সর্বজনশ্রদ্ধেয় এবং এতটাই ভারতীয় রাজন্যবর্গের উপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম ছিলেন যে বিরূঢ়কের পক্ষে তাঁকে উপেক্ষা করা কোন ভাবেই সম্ভব ছিলনা। বুদ্ধদেবের প্রতি সম্মানপ্রদর্শন তখন অবশ্য কর্তব্যকর্মের মধ্যে গৃহীত হয়েছে।সুতরাং বিরূঢ়ক উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বুদ্ধ পদতলে বসে তিনি কেন ছায়াপূর্ণ গাছের আশ্রয় ছেড়ে পত্রবিহীন শাখাসর্বস্ব বৃক্ষমূলে বিশ্রামহেতু আশ্রয় নিয়েছেন যেখানে অস্তগামী রবির প্রখর কিরন বিশ্রামগ্রহনের অন্তরায় এই প্রশ্ন বুদ্ধের উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন| বুদ্ধদেব তাঁকে জানান সজ্ঞাতির ভূমিস্থিত পত্রহীন বৃক্ষের ছায়া শত্রু ভূখণ্ডের বৃক্ষছায়া তুলনায় শীতল। বিরূঢ়কের এই রূপক বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি যে বুদ্ধদেব তাঁর সজ্ঞাতির ধ্বংসরোধের উদ্দেশ্যে তাঁর যাত্রাপথে উপস্থিত হয়েছেন। বিরূঢ়ক তাঁর সৈন্যবাহিনীকে শ্রাবস্তী ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।


একমাস পরে বিরূঢ়ক সংকল্প পালনার্থে পুনর্বার অভিযানে বেরোলে দ্বিতীয়বারে একই ভাবে বুদ্ধের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রাজধানীতে প্রত্যাগমনে বাধ্য হন।তৃতীয়বারে আবার একবার সেনা অভিযানের প্রচেষ্টা বুদ্ধদেব দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। বিরূঢ়ক আবার একমাস পরে চতুর্থবারের জন্য তাঁর প্রতিজ্ঞাপূরণের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীসহ কপিলাবস্তুর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। চতুর্থবারে কিন্তু বুদ্ধদেব আর এই অভিযানে বাধা দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেননি। তিনি ভিক্ষুসংঘকে জানান শাক্যদের কর্মফল ভোগ করার সময় সমাগত। মহামৌদগল্লায়ন আবার শাক্যদের রক্ষা করার জন্য অনুরোধ জানালে বুদ্ধদেব তাঁর অনিচ্ছার কথা তাঁকে জানান। মহামৌদগল্লায়ন দৈবশক্তি কে কাজে লাগিয়ে শাক্যদের রক্ষা করার শেষ চেষ্টা করেন। তিনি দৈববলে কপিলাবস্তু পৌঁছে তার ভিক্ষাপাত্রে ৫০০ শাক্যকে লুকিয়ে নিয়ে জেতবনে ফিরে আসেন। জেতবনে ফেরার পরে সেই ভিক্ষাপাত্রের আবরণ উন্মোচন করার পরে তা শুধুমাত্র রক্তপূর্ণ ভিক্ষাপাত্র হিসেবেই দেখা যায়। এই রূপক ও আসন্ন শাক্যবংশের ধ্বংসের ভবিষ্যতবানী হিসেবে ভিক্ষুসংঘের মধ্যে প্রচারিত হয়।


বিরূঢ়ক সৈন্যবাহিনী নিয়ে কপিলাবস্তু পৌঁছান এবং শাক্য বংশ ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নগর প্রাকারের বাইরে অবস্থান করতে শুরু করেন। শাক্যদের শরসন্ধানের প্রতিভা তৎকালে ভারতে সুবিদিত ছিল সে বিষয়ে বিরূঢ়ক অজ্ঞ ছিলেন না। কিন্তু শাক্যরা বুদ্ধদেবের শরণাপন্ন হয়ে অহিংসায় ব্রতী হয়েছেন এই খবর ও তাঁর কাছে ছিল।সুতরাং শাক্যদের দ্বারা তার সৈন্যহানি হবে না এই সম্বন্ধে তাঁর শ্রূততথ্য যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে নগরপ্রাকারের বাইরে সৈন্য সমাবেশ করে শাক্যদের প্রতিক্রিয়া জানার প্রচেষ্টায় অপেক্ষা করতে থাকেন। আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি নগরের দিকে কিছু আক্রমণ পরিচালনা করলে শাক্যরা শরবর্ষণ শুরু করে। শাক্যরা কিন্তু তাঁদের অহিংসা ও প্রাণীহত্যা থেকে বিরত থাকার পথ থেকে বিচ্যুত হননি।তাঁরা কোশলসেনাকে আক্রমণ করে তাদের ঢাল ভেদ করতে থাকেন এবং শত্রুসৈন্য কে ঢালবিহীন করার পর তাদের কর্ণকুন্ডল বিদ্ধ করে কান দ্বিখণ্ডিত করতে থাকেন।বিরূঢ়ক এই আক্রমণের স্বরূপ বুঝতে না পেরে প্রাথমিক পর্যায়ে আতঙ্কিত হন এবং শাক্যদের সম্বন্ধে প্রাপ্ত তথ্য সমূহ ভ্রান্ত ভেবে তাঁর গুপ্তচরবাহিনীকে দোষারোপ করে দণ্ডিত করতে উদ্যোগী হলে গুপ্তচরবাহিনীর প্রধান তাঁকে প্রকৃত তথ্য জানান যে শাক্যরা কোশলসেনার প্রাণহরণের বদলে শুধুমাত্র কর্ণছচ্ছেদন করেছেন। তাঁরা জীব হত্যা না করার যে মহান ব্রতে ব্রতী হয়েছেন সেই পথ থেকে বিচ্যুত হননি। এই খবর বিরূঢ়কের রণ উন্মাদনাকে দ্বিগুণ করে কারণ তিনি নিশ্চিন্ত হন শাক্যদের দ্বারা তাঁর একটি সৈন্যের ও প্রাণহানি হবে না। তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনীকে দুর্গপ্রাকার ভেদ করার নির্দেশ দেন। কোশল সেনা যে কোন প্রকারে নগরীর প্রবেশপথ খুলে ফেলতে সমর্থ হয় এবং এক বিরাট নরসংহারযজ্ঞ সংঘটিত হয় কপিলাবস্তুর পথে-প্রান্তরে। দুগ্ধপোষ্য শিশু থেকে অশীতিপর বৃদ্ধ কেউ কোশল সেনার উদ্যত তরবারী থেকে রক্ষা পায়নি। কপিলাবস্তুর রাস্তা রক্তনদীর রূপ ধরে। বিরূঢ়ক প্রতিজ্ঞা পূরণ করেন। তিনি তাঁর রাজসিংহাসন কে শাক্যরক্তে ধৌত করতে চেয়েছিলেন| শুধু সিংহাসন নয়, সংস্থাগার, রাজপ্রাসাদ, রাজপথ সবকিছুকেই তিনি রক্তস্নান করানোর সবরকম ব্যবস্থা করেন। শাক্যদের লুকানোর কোন জায়গা তিনি বাকি রাখেননি। এরপরের ঘটনার দু'রকম বিবরণ পাওয়া যায়। কোন কোন মতে এই রক্তস্নাত নগরে তখনও যে কয়েকজন জীবিত ছিলেন তাঁদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মহানাম বিরূঢ়কের সমীপে উপস্থিত হন এবং যাই হোক না কেন বিরূঢ়ক তাঁর রক্তের সম্পর্কের দৌহিত্র সেই কথা স্মরণ করিয়ে একটি অনুরোধ করেন। তিনি বিরূঢ়ক কে জানান তিনি রোহিনী নদীতে যতক্ষণ ডুবে থাকতে পারবেন ততক্ষন যেন বিরূঢ়ক শাক্যদের হত্যা না করেন এবং নগর ছেড়ে নিরাপদে চলে যেতে দেন। বিরূঢ়ক এতে কৌতূক অনুভব করেন এবং কতক্ষণই বা বৃদ্ধ জলে নিমজ্জিত অবস্থায় থাকতে পারবেন এই ভেবে এই শর্তে রাজি হন। মহানাম তাঁর দীর্ঘ চুলের প্রান্তভাগ একটি জলে নিমজ্জিত গাছের শিকড়ে বেঁধে জলের ভেতরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বহুক্ষণ মহানাম জলে ডুবে থাকায় সমস্ত শাক্যরাই নগর ত্যাগে সমর্থ হন। বিরূঢ়ক অবশেষে জলে সৈন্য নামিয়ে মহানামের দেহ খুঁজে পান এবং পুনর্বার প্রতারিত হয়ে (এবারে মহানামের জীবনের বিনিময়ে) আবার দ্বিগুণ ক্রোধান্বিত হয়ে অবশিষ্ট ৫০০ শাক্যকে বন্দী করে কোশলে প্রত্যাবর্তনের পথ ধরেন।

দ্বিতীয় কাহিনী অনুসারে বিরূঢ়ক মহানাম ও তাঁর পরিবারের শাক্যদের ছাড়া বাকি সমস্ত শাক্যকে মারার জন্য তাঁর সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। বিরূঢ়কের সেনাবাহিনী কপিলাবস্তুর রাজপথ রক্তে রাঙিয়ে শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশ করলে কিছু শাক্য তৃণকে তাঁদের আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করেন এবং কিছু শাক্য শরগাছকে তাঁদের আচ্ছাদন হিসেবে ব্যবহার করে আত্মগোপনের চেষ্টা করলে তা ব্যর্থ হয় এবং সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পরেন| সেনাবাহিনী তাঁরা শাক্যবংশীয় কিনা জানতে চাইলে তাঁরা জানান যে তাদের হস্তধৃত বস্তুসমূহ যথাক্রমে তৃণ ও শরগাছ এবং তা শাক্য (শালগাছ) নয়। বলাবাহুল্য, এরা প্রত্যেকেই কোশল সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন এবং মহানামের পরিবারসহ বিরূঢ়কের সমীপে আনীত হন। এই বন্দীদের নিয়ে বিরূঢ়ক শ্রাবস্তীতে প্রত্যাগমন উদ্দেশ্যে রওনা হন। রাত্রি শেষে পরদিন প্রত্যূষে একটি হ্রদের তীরে প্রাতঃরাশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিরূঢ়ক সেনাবাহিনীকে থামার নির্দেশ দিয়ে মহানামকে তাঁর সঙ্গে প্রাতঃরাশ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন।যেভাবে তাঁর বাবাকে ছলনা করে জানানো হয়েছিল যে শাক্যরা বাসবক্ষত্রিয়ার সঙ্গে একই পাত্র থেকে অন্ন গ্রহণ করেছেন সেই ঘটনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার উদ্দেশ্যে একই পদ্ধতিতে মহানামকে তাঁর সঙ্গে একই পাত্র থেকে প্রাতঃরাশ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। এই কাজ করতে পারলে মহানামের বংশ গৌরব ধূলিস্যাৎ হবে এই ছিল বিরূঢ়কের উদ্দেশ্য। মহানাম জানান তিনি স্নানসমাপনান্তে প্রাতঃরাশ গ্রহণ করবেন। এরপর তিনি হ্রদে নেমে চুলের অগ্রভাগে একটি গ্রন্থি বেঁধে পা দুটোকে চুলের ভেতরে ঢুকিয়ে হ্রদের জলে ডুব দেন। সেখানে মহানামের প্রবেশকালে নাগরাজ উপস্থিত হন এবং মহানাম কে নাগলোকে নিয়ে যান। মহানাম সেখানে আরও ১২ বছর সুখ ভোগ করেন।বিরূঢ়ক মহানামের ফিরে আসতে দেরি হওয়ায় তাঁর সন্ধানে চতুর্দিকে সেনাপ্রেরণ করলেও মহানামের কোন হদিস না পেয়ে বন্দীদের নিয়ে শ্রাবস্তী উদ্দেশ্যে রওনা হন।


বিরূঢ়কের অন্তিম পরিণতির প্রতি আলোকপাত না করলে এ প্রবন্ধ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। শাক্যরক্তে কপিলাবস্তুকে স্নান করিয়ে পেছনে স্বজনহীন ক্রন্দনরত নগরকে ফেলে রেখে ৫০০ শাক্য নারী-পুরুষকে বন্দী করে বিজয়োল্লাসমত্ত বিরূঢ়ক শ্রাবস্তীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এর পরের ঘটনা সম্বন্ধে দুটো প্রচলিত কাহিনী পাওয়া যায়। একটি কাহিনী অনুসারে তিনি এক অগ্নিকাণ্ডের শিকার হন| ঘটনাটি নিম্নরূপ-

৫০০ শাক্যবন্দী সহ বিরূঢ়ক শ্রাবস্তীতে ফিরে আসার পরে তাঁদের হাত-পা কেটে ফেলার আদেশ দেন। ছিন্ন হস্তপদ এই ৫০০ বন্দীকে এর পরে একটি গর্তে ফেলে তাঁদের গায়ে গলিত লোহা ঢেলে দেওয়া হয়। এই মারাত্মক অত্যাচার বুদ্ধদেবের মনকে দ্রবীভূত করে এবং তিনি জানান বিরূঢ়ক তাঁর অপকর্মের শেষ সীমায় উপস্থিত হয়েছে এবং সাত দিনের মধ্যে তাঁর বিনাশ সাধিত হবে। যে অগ্নিপ্রদাহময় মৃত্যু তিনি নিরপরাধ ৫০০ শাক্যবন্দীর জন্য বরাদ্দ করেছিলেন সেই যন্ত্রনায় তাঁকেও দগ্ধ হতে হবে।এরপরে তিনি সেই মুমূর্ষু ৫০০ নিরপরাধ শাক্যকে আপন স্নিগ্ধ করস্পর্শে শীতল করেন, তাঁদের যন্ত্রণা মুক্তি ঘটান এবং তাঁদের স্বর্গারোহণ এর ব্যবস্থা করেন। বিরূঢ়ক বুদ্ধদেব মুখনিঃসৃত তাঁর পরিণতি শ্রবণে অতি ভীত হন এবং তার সব দুষ্কর্মের সহচর এক আমাত্যর দ্বারস্থ হন। বুদ্ধদেব তাঁর অগ্নিদহনে মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।সেই আমাত্য তাঁকে জলের ওপরে বাসস্থান নির্মাণ করে সাতদিন সেই বাসস্থান বসবাসের পরামর্শ দেন। সেই বাসস্থানে কোনরকম দাহ্যবস্তুর প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। বিরূঢ়ক তাঁর মহারানীর সঙ্গে সাত দিন সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন। ৬দিন নিরুপদ্রবে কাটার পরে সপ্তম দিনে একটি দর্পণে সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে রানির ব্যবহৃত একটি রেশমবস্ত্রে অগ্নিসংযোগ হয়। এই আগুন সম্পূর্ণ জলটুঙ্গী কে আবাসিক সহ ভস্মীভূত করে এবং সবান্ধব সজ্ঞাতি বিরূঢ়ক রাজা এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান। তাঁর দেহাবশেষ জলজন্তুর খাদ্যরূপে গৃহীত হয় অর্থাৎ তাঁর ইহলৌকিক দেহের সৎকার করা সম্ভব হয়নি এবং তাঁর আত্মা নিম্নতম নরকে স্থান লাভ করে।

দ্বিতীয় প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, মহানামের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার এবং বাকি রক্ষা পাওয়া শাক্যদের বন্দী করে বিরূঢ়ক শ্রাবস্তী উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে রাত্রি নামে এবং তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনী এবং বন্দীসহ অচিরবতী নদীর কুলে রাত কাটানোর জন্য মনস্থির করেন। সৈন্যবাহিনীর কিছু অংশ নদীসংলগ্ন তটভূমিতে এবং বাকি অংশ একটু দূরে বাঁধের উপরে শয্যা পাতে। এরপর সেখানে শ্বেত পিপীলিকার এক স্রোত উপস্থিত হয়।তটভূমিতে সৈন্যদের সঙ্গে যে বন্দীরা শয্যা পেতেছিল, তারা পিঁপড়ের কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে বাঁধের উপরে উঠে আসে| অন্যদিকে বাঁধের উপরে বন্দীদের পাহারা দেওয়ার দেয়ার জন্য যে সেনাদল নিয়োজিত ছিল তারা পিঁপড়ের লক্ষ্যবস্তু হয়। তারা পিঁপড়ের কামড়ের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বাঁধের উপর থেকে নেমে এসে অচিরবতীর তটরেখা বরাবর শয্যা পাতে। এরপরে রাত গভীর হলে এক ভয়ংকর প্রলয়ঙ্করী প্লাবন আসে অচিরবতী নদীতে।সেই প্লাবন নদীর তটরেখাকে ভাসিয়ে নিয়ে বাঁধের কাছে এসে শান্ত হয়। বিরূঢ়কের নিজস্ব ছাউনিও তটরেখা সন্নিহিত ছিল। সেই মহাপ্লাবন বিরূঢ়ককে তাঁর সৈন্যবাহিনী সমেত অতল কালো, নিঃসঙ্গ, নিঃসীম মৃত্যুর কালগর্ভে নিক্ষেপ করে। বিরূঢ়কের মর্মান্তিক পরিনতি জানার পরে বুদ্ধ মুখনিঃসৃত বাক্যবন্ধ ছিল-

পুপ্পানি এব পচিনান্তম

ব্যাসত্তমানসম নরাম

সুত্তম গামম মহগোভ

মাচ্চু অদয়া গচ্ছতি|

" সাগরের ভয়ঙ্কর প্লাবন আসিয়া

যেরূপ নিদ্রিত গ্রামে লয় ভাসাইয়া

মৃত্যুও সেইরূপ হবে যে জন বিলাসী

যে চুনে বিলাস ভোগে ভাবি ফুলরাশি||"


সমাপ্ত||


তথ্যসূত্র:

1.ভগবান বুদ্ধ, ডি. কোশাম্বী|

2.সুত্তনিপাত

3..জাতক, ঈশানচন্দ্র ঘোষ|।

4.ধম্মপদ অট্ টকথা

5. ধম্মপদ, প্রকাশক আচার্য ভিক্ষু শাসন রক্ষিত

6.The great chronicles of Buddhas by Ven. Mingun Sayadaw.

7.S.N. Goenka; published in Vipassana Research Institute, source: Googleশাক্যবংশের পরিনতি

বাপ্পা গোস্বামী

বড়ুয়ারা অবশ্যই মারমাগ্রী নয়-জয়নন্দ বড়ুয়া জয়।

বড়ুয়ারা অবশ্যই মারমাগ্রী নয়-জয়নন্দ বড়ুয়া জয়।

 ঋদ্ধিময় ভূ-তাত্ত্বিক বিষয়াবলি:

বেশ কয়েক জায়গায় দেখলাম বলা হচ্ছে বড়ুয়ারা মারমাগ্রী এবং অনেক বড়ুয়া ছেলেদের দেখলাম নিজের নামের পাশে তারা মারমাগ্রী লিখেছে। কে কার নামের পাশে কি লিখবে, সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু প্রশ্ন উঠে যখন তারাই বলে মারমাগ্রী হলো বড়ুয়াদের আরেক জাতিগত নাম! ৩১-১০-১৪ইং তারিখে শ্রদ্ধেয় গুরুভান্তে খ্যাত “উ পঞ্ঞা জোত থের” চট্টগ্রামের মুসলিম হলে বড়ুয়া জাতির ইতিহাস সম্পর্কে বলেছিলেন যে বড়ুয়ারা বাঙালী না, তারা আরাকানিজ বংশোদ্ভূত মারমাগ্রী বা মগ। যেটা ডাহা মিথ্যে। মারমাগ্রী অবশ্যই বড়ুয়াদের জাতিগত নাম নয় এবং বড়ুয়ারা অবশ্যই আরাকানিজ বংশোদ্ভূত মারমাগ্রী বা মগ নয়। কেন নয় তা নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করলাম, এবং তা ইতিহাস ঘেটে এবং রেফারেন্সের সাহায্যেই ।



এজন্য আমাদের প্রথমেই জানতে হবে বড়ুয়াদের ইতিহাস। এবং এরই সাথে মারমাগ্রী শব্দটা কোথা হতে কিভাবে এলো তার ইতিহাস।

বড়ুয়াদের ইতিহাসঃ


'বড়ুয়া’ বর্তমান বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার একটি সুপরিচিত নাম। এদেশে বসবাসকারী অধিকাংশ বৌদ্ধরাই ‘বড়ুয়া’ নামে অভিহিত। ইতিহাস সূত্রে এটা সুনির্দিষ্টরূপে প্রমাণিত যে, বাঙ্গালী বড়ুয়া বৌদ্ধরা এদেশের আদি বাসিন্দা। এই বড়ুয়া বৌদ্ধরা ক্ষুদ্র জাতি সত্ত্বায় বর্তমানে বিদ্যমান থাকলেও তাদের রয়েছে অতি সমৃদ্ধ গৌরবনীয় ইতিহাস, প্রসিদ্ধ পরিচয়। প্রথমে ‘বড়ুয়া’ শব্দের আভিধানিক অর্থ জানার চেষ্টা করি- “বড়– ধাতুর সাথে ‘উয়া’ প্রত্যয় যোগে ‘বড়ুয়া’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে, অর্থাৎ বড় +উয়া = বড়ুয়া। বিশ্ব কোষ অভিধানে বড়ুয়া সম্বন্ধে লিখিত আছে -‘একটি আখ্যায়িকা হতে জানা যায় বড়ুয়াগণ একটি প্রতিভাবান বৌদ্ধ রাজবংশের বংশধর’। সংস্কৃত ভাষায় ‘বটুক’ শব্দের অর্থ করা হয়েছে বড়ুয়া বা শ্রেষ্ঠ”।


১। ‘বড়ুয়া’ শব্দটি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকেই বোঝায়। মগধ বা বিহার হতে আগত লোকেরা চট্টগ্রামে বর্তমানে ‘বড়ুয়া’ নামে পরিচিত।

বাংলা একাডেমীর অভিধানে ‘বড়ুয়া’র অর্থ দেখানো হয়েছে -

(১.) পদস্থ বা সম্মানিত ব্যক্তি; ধনী।

(২.) চট্টগ্রামের বৌদ্ধদের ও অহমিয়া হিন্দুদের পদবি; আসামের কোনো কোনো মুসলমানের পদবি (সংস্কৃত উৎস নির্দেশ করা হয়েছে - বড্র >বড় +উয়া (বড় ঘর অর্থে) । “জ্ঞানেন্দ্র মোহন দাস কৃত অভিধানে এর অর্থ লিখা হয়েছে - “বড়ুয়া” = (বোড়–আ) বি বটু, ব্রাহ্মণ- কুমার, যুবক, ব্রাহ্মণ”। ‘শব্দবোধ অভিধান’ বলে - “বড়ুয়া” =

(১.) আসাম প্রদেশবাসী ব্রাহ্মণদের উপাধি বিশেষ, দেশজ।

(২.) মহান,অর্থশালী”। আসাম প্রদেশে বৈদ্য বড়ুয়া, কায়স্থবড়ুয়ারূপে বিভিন্ন বড়ুয়ার সন্ধান পাওয়া যায়।

‘চন্দ্রকান্ত অভিধান’ এ আছে - “বড়ুয়া” = (অং-বর=প্রধান) বি, অহোম রাজার দিনত কোন এক খেলর প্রধান বিষয়া; এই বিলাক বিষয়ার প্রধান কাম আছিল শোধশোধা আরু দেশর শান্তিরক্ষা করা”। গৌহাটির বড়ুয়ারা সিংহ রাজার বংশধর। ত্রিপুরার রাজাদের ইতিহাস ‘রাজমালা’তে বড়ুয়া জাতির উল্লেখ আছে। ‘সেকালে পাবর্ত্য প্রধাণগণ তাঁহাদের অধীনস্থ প্রজাগণের নায়করূপ নির্বাচিত হইতেন এবং তাঁহাদিগকে সর্দার, হাজারী ও বড়ুয়া উপাধিতে ভূষিত করিতেন।


২। “বিজয়মাণিক্য রাজার

জমিদার আমি,

সে রাজার ‘বড়ুয়া’

হৈয়া রাজা হৈলা তুমি।

(রাজমালা, পৃ: ১২০)”

এমনকি আরাকান ক্রোণোলজিতেও লেখা আছে যে বাংলাদেশী বৌদ্ধরা আর্যভারত তথা মজ্ঝিমাদেশ বা মধ্যপ্রদেশ থেকে এসেছে।


''Barua'' is the last name of a distinct Bengali - speaking ethnic religious minority clan representing the plain area Buddhist community in Bangladesh. They mainly live in the Chittagong region. Many moved to Kolkata, India after partition of India in 1947; many also moved to England in the 1950s and 1960s. The plain Buddhists of Bangladesh known as the Burua-Buddhist are the ancient peoples of Bangladesh who have lived here for five thousand years according to Arakanese chronology. ]They insist that they came from the Aryavarta or the country of the Aryans which is practically identical to the country later known as the Majjhimadesh or Madhyadesh in Pali literature.


Bengali speaking Barua people of Chittagong are all Buddhist by religion, unlike Hindu Barua of Assam who are generally Brahmins or Ahom or may belong to any other general caste in India. The word 'Barua' came from 'Baru' meaning great and 'Arya ' meaning Noble ones.


৩। “বড়ুয়া’ শব্দের উদ্ভব সম্পর্কে দু’টি মত প্রচলিত আছে। একটি হচ্ছে বড় আর্য (বর অরিয়) থেকে ‘বউড়গ্যা’ বা বড়ুয়া শব্দটি এসেছে। এর সমর্থনে বলা যায়, বৌদ্ধ সমাজে পুত্রবধুগণ শ্বশুড়কে বউড়গ্যা এবং শাশুড়ীকে আযোয়্যাঁ সম্বোধন করত। চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় এখানো এ শব্দ দুটির ব্যবহার দৃষ্ট হয়। বউড়গ্যা বড় আর্য এবং আযোয়্যাঁ- আর্যমা শব্দের বিকৃত ব্যবহারিক শব্দ। এখানো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বড়ুয়াকে বউড়গ্যা বলা হয়। যেমন - বউড়গ্যা পাড়া, বউড়গ্যার টেক ইত্যাদি। এতএব, বড় আর্য (বর অরিয়)>বউড়গ্যা> বড়ুয়া এভাবে উদ্ভব হওয়া সম্ভব। আবার সেকালের পরিবার ও সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের বড়িয়া সম্বোধন করা হত বলে জানা যায়। এই বড়িয়া শব্দটি কালক্রমে বড়ুয়া হয়েছে বলে কারো কারো ধারণা।


৪। “বৌদ্ধদের বিশ্বাস বড়ুয়ারা শ্রেষ্ঠ জাতি, তাদের মতে ‘বড়ুয়া’ শব্দটি বড় আর্য (বড়+অরিয়) থেকে এসেছে, এর অর্থ বড় বা উৎকৃষ্ট। ‘বড়ুয়া’ উপাধির অর্থ হল বড় আর্য এবং বড় সৈন্যধ্যক্ষ। “বড়ুয়া’ শব্দের উৎপত্তি সম্বন্ধে কোন কোন পণ্ডিত বলেন - ভগবান বুদ্ধ মানব সমাজের ভব- দুঃখ মুক্তির উদ্দেশ্যে যে সত্যপথ আবিস্কার করেছিলেন, তা পালি ভাষায় ‘অরিয় সচ্চং’ (আর্যসত্য) নামে অভিহিত। যারা বুদ্ধের প্রচারিত ধর্ম তথা আর্যসত্য গ্রহণ করতেন, তারাই বড় আর্য (বুদ্ধের উপাসক বা শিষ্য) নামে অভিহিত হতেন। এই ‘বড় আর্য (বড়+অরিয়) হতে ‘বড়ুয়া’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, ইহার সমর্থনও যুক্তিপূর্ণ।


৫। “ভারতে প্রকাশ্যে বৌদ্ধ নির্যাতনের ফলে টিকে থাকা অসম্ভব হলে বৃজি বা বজ্জিাকাপুত্ত উপজাতির এক ক্ষত্রিয় রাজপুত্র সাতশত অনুচরসহ মগধ (পাটনা) হতে পালায়ন করে পঁগার পথে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও আধুনিক নোয়াখালীতে এসে উপস্থিত হন। (চট্টগ্রামের ইতিহাস, পুরানা আমল, পৃ.৩৯)। মগধের বৈশালীর বৃজিগণ চট্টগ্রাম আগমন করায় ‘বজ্জি’ হতে ‘বড়ুয়া’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। ‘বড়-য়া’ শব্দটি বৃজি বা বজ্জি কথারই রূপান্তর বলে অনুমান করা হয়েছে। ড. বেনীমাধব বড়ুয়াও বজ্জি হতে ‘বড়ুয়া’ উপাধি এসেছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। পণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির, ড. প্রণব কুমার বড়ুয়াও এই মতে বিশ্বাসী।” মগধের বৃজি জাতিরা রাজবংশের বংশধর সেহেতু শ্রেষ্ঠতে ‘বজ্জি’ থেকে অপভ্রংশে ‘বড়ুয়া’ শব্দ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।


৬। “বৌদ্ধ ঐতিহ্য অনুসারে জানা যায়, ভগবানের পরিনির্বাণের পর বৈশালীর লিচ্ছবীগণ কুশীনারার মল্লগণের নিকট দূত প্রেরণ করে জানালেন -ভগবান ক্ষত্রিয় আমারও ক্ষত্রিয়, আমরাও ভগবানের পবিত্র অস্থির অংশ পাওয়ার যোগ্য। বৈশালীর লিচ্ছবীর মত বৃজিরাও ছিল উন্নত জাতি এবং সংস্কৃতিবান- কাজেই বৃজিরাও ক্ষত্রিয় ছিল। বজ্জি ও লিচ্ছবী নাম কখনও কখনও একই অর্থে ব্যবহৃত হত। বজ্জি রাজ্যের মধ্যেই লিচ্ছবীরা অর্ন্তভূক্ত ছিল। বি.সি লাহাও বলেছেনে, বজ্জি ও লিচ্ছবী সমার্থক। লিচ্ছবীদের সম্পর্কে সমস্ত ভারতীয় ঐতিহ্য একমত যে লিচ্ছবীরা ক্ষত্রিয় ছিলেন। বেশী দিনের কথা নয়, বড়ুয়া বধুরা শাশ্বুড়ীকে ‘হাযমা’ বলে সম্বোধন করত। এখনও কোথাও কোথাও এর প্রচলন দেখা যায়। ‘হাযমা’ পালি শব্দ ‘অরিযমা’র অপভ্রংশ, শুদ্ধ বাংলা আর্যমা।

স্বামী আর্যপুত্র, শ্বশুর আর্যপিতা, শাশুড়ি আর্যমাতা, এগুলি উন্নত সমাজেরই ভাষা। এতএব, বড়ুয়ার যে উন্নত সংস্কৃতির অধিকারী তা সহজেই অনুমেয়”।


৭। “বড়ুয়া’ সম্প্রদায়ের উদ্ভব সম্পর্কে একটি প্রচলিত জনশ্রুতি রয়েছে। তা হল, ত্রয়োদশ শতকে তুর্কী আক্রমণ শুরু হলে মগধের বৃজি গোত্রের বৌদ্ধগণ পলায়ন পূর্বক আত্মরক্ষার জন্য পূর্বাঞ্চলের স্বর্ধমীদের নিকট আশ্রয় নিয়েছিল। তারা ক্রমশ দক্ষিণ পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে হতে চট্টগ্রাম বিভাগে উপনীত হয়। চট্টগ্রাম তখন আরাকানের বৌদ্ধ রাজার অধীন ছিল। এখানে আর ধর্মলোপের ভয় ছিল না। তারা ইতিপূর্বে খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে মগধ থেকে আগত চন্দ্রসূর্যের সঙ্গীদের উত্তর পুরুষদের সঙ্গে মিলিত হয়। পরবর্তীতে তারা ‘বড়ুয়া’ বৌদ্ধ নামে পরিচিতি লাভ করে। নতুন চন্দ্র বড়ুয়াও প্রায় একই মতে বিশ্বাসী। তাঁর মতে- দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতকে ভারতে বৌদ্ধদের উপর উপর্যোপরি মর্মান্তিক নির্যাতন ও বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান গুলো সমূলে ধ্বংস করার ফলে সেখানে বৌদ্ধগণ ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়। কিছু সংখ্যক বৌদ্ধ তিব্বত ও নেপালে চলে যায়।


৮। ”বড়ুয়া” উপাধি কবে কখন প্রচলিত হয় তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা কঠিন। একটা ধারণা আছে ত্রয়োদশ শতকে মগধের বৈশালী থেকে আগত চট্টগ্রামে আশ্রয় গ্রহণকারী বজ্জিবংশীয় লোকেরা নিজেদের নামে শেষে সম্ভ্রান্ত সূচক বজ্জি পদবি ব্যবহার করত। আর স্থানীয় বৌদ্ধরা আদিকাল থেকে নিজেদের গোত্রীয় পদবি ব্যবহার করত। কালক্রমে বৌদ্ধরা সংখ্যায় সংকোচিত হতে থাকলে নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য স্থানীয় বৌদ্ধরাও বজ্জিদের অনুকরণে বজ্জি পদবী ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তীতে বজ্জি শব্দ থেকে বড়ুয়া শব্দের উদ্ভব হয়। তবে পঞ্চদশ শতকের শেষ অথবা ষোড়শ শতকের প্রারম্ভ থেকে চট্টগ্রামের বৌদ্ধরা বড়ুয়া পদবি ব্যবহার শুরু করে বলে অনুমিত হয়। এ সময়ে অন্যান্য পদবীরও ব্যবহার ছিল; যেমন -হাজারী, সিং, বিহারী, রাজবংশী, পাল, সিকদার ইত্যাদি। ড. প্রণব কুমার বড়ুয়ার মতে, ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধ থেকে ঐ সকল পদবী বিলুপ্ত হয়ে একমাত্র বড়ুয়া পদবী প্রচলিত থাকে। বর্তমানে বাঙ্গালী বৌদ্ধদের সম্প্রদায়গত উপাধি হল বড়ুয়া, এরাই বাংলাদেশের বড়ুয়া বৌদ্ধ সম্প্রদায়। ষোড়শ শতকের প্রথম পাদের কবি চন্ডীদাসের কবিতার একটি পদে বড়ুয়া শব্দের ব্যবহার দৃষ্ট হয়। তাঁর কবিতার পদটি নিম্নরূপঃ 


“একে তুমি কুলনারী,

কুলে আছে তোমার বৈরী,

আর তাহে বড়ুয়ার বধু”।


“বাংলাদেশের বড়ুয়া বৌদ্ধরা মূলত দক্ষিণ পূর্ব বাংলার ষষ্ঠ হতে একাদশ শতাব্দীর প্রাচীন সমতটের সিংহ বংশ, বর্ম বংশ, খড়গ বংশ, ভদ্র বংশ, দেব বংশ, চন্দ্র বংশ, উত্তর বঙ্গের প্রাচীন বাংলার সপ্তম শতাব্দীর বরেন্দ্র ভূমির পাল বংশীয়, চট্টগ্রামের বৌদ্ধ সমান্ত রাজা মনিভদ্র, রাকাই, জয়চন্দ্র ও মুকুট রায়ের পরবর্তী বংশধর। উপরোক্ত বৌদ্ধ রাজন্যবর্গের পরবর্তী বংশধরই বড়ুয়া এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ – প্রাচীন সমতট, বর্তমান কুমিল্লার ময়নামতী, শালবন বিহার, রাজ বিহার (ইট খোলা বিহার), দেব পর্বত, রাজশাহীর পাহাড় পুরের রাজা ধর্মপাল কর্তৃক নির্মিত সোমপুর বিহার, বগুড়ার গোফুল গ্রামের বাসু বিহার, দিনাজপুরের গঙ্গা ও করতোয়া নদীর সঙ্গমস্থলে রামাবতী নগরে রাজা রাম পাল কর্তৃক নির্মিত ‘জগদ্দল বিহার’, ময়নামতী পাহাড়ের দক্ষিণে দেব রাজ কর্তৃক নির্মিত আনন্দ বিহার, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প-িত বিহার, চট্টগ্রাম শহরের দেব রাজাদের দেব পাহাড়, পটিয়ার চক্রশালা ইত্যাদি। এসব বিহারের অনুকুল্যেই পুরুষ পরম্পরা বাঙ্গালী বড়ুয়ারা বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা ও অনুশীলন করে আসছেন। যাদের ধর্মচর্চায় বৌদ্ধ বিশ্বের অন্যতম নিকায় থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্ম নিখূতভাবে বিদ্যমান।


এবার দেখা যাক “মারমাগ্রী” শব্দটা কোথা হতে কিভাবে এলোঃ বড়ুয়াদেরকে স্মরণাতীতকাল থেকে আরাকানিজ ও বার্মিজরা মার্মাগ্রী বলে সম্বোধন করে থাকে । এই চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অংশ ছিল এবং এখানকার অধিবাসী ছিল চাকমা, মারমা ,রাখাইন ও বড়ুয়া। বড়ুয়াদেরকে আরাকানিজ ও বার্মিজরা মার্মাগ্রী বলে সম্বোধন করতো এটার অনেক রেফারেন্স বা গবেষণাপত্র আছে। অনেকে গুলিয়েও ফেলেছেন যেহেতু আরাকান রাজার অধীনে থাকেন, এবং বৌদ্ধ ধর্ম পালন করেন তাই বড়ুয়ারা আরাকান এবং বারমিজদেরই একটা উপজাতি এবং তারা বার্মা হতে আগত যা সত্য নয়। প্রায় সব ইতিহাসই বলে বড়ুয়ারা ভারত থেকেই এসেছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো কেউ যদি আমাকে জেমস বন্ড বলে ডাকে তবে আমি আমার নাম ধাম ফেলে দিয়ে নিজের নাম জেমস বন্ড রেখে নিজেকেও জেমস বন্ড ভাবতে পারি না। যদি আমি সেটা করি তবে আমি অবশ্যই ভূল জগতে ভূল ধারণা নিয়ে আছি। আরাকানরা বড়ুয়াদের মারমাগ্রী ডাকতো বলে তারা মারমাগ্রী হয়ে যায় নি। যাবেও না। বড়ুয়ারা ভবিষ্যতে বড়ুয়াই থাকবে। আর একটা জাতি যখন অনেক দীর্ঘ সময় ধরে একটা দেশে অবস্থান করে তাদের জাতীয়তা সেটাই হয়ে যায়। সেটাই হওয়া উচিৎ। 


বড়ুয়ারা শত শত বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে (মানছি শুধু চট্টগ্রাম অংশ আরাকান রাজার অধীনে চট্টগ্রামে ছিলো তাও মাত্র ১৪৫৯- ১৬৬৬ পর্যন্ত দুই শত সাত বছরের জন্য, ঈংরেজরাও আমাদের প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছে। তবে আমরা কি ইংরেজ?)। শত শত বছর ধরে বাংলাদেশে(মাত্র ২০৭ বছর বার্মার অধীনে এবং ১৯০ বছর ইংরেজদের অধীনে) বসবাস করে আসা জাতটার আদিপিতা ভারতের হলেও এখন অবশ্যই তারা বাঙালী। আমরা বাঙালী বড়ুয়া বৌদ্ধ জাতি। ইতিহাসকে কখনোই মিথ্যা বানানো যায় না।


পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের ‘বড়ুয়া’ জনগোষ্ঠী এদেশের আদিবাসী, স্বতন্ত্র জাতি, এদেশের ভূমিজ ও দেশজ সন্তান। দীর্ঘকালে ঘাত- প্রতিঘাতের পর রাজনৈতিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বড়ুয়াদের আচার- অনুষ্ঠানে, কৃষ্টিতে ও সামাজিক জীবনে হিন্দু- মুসলমান প্রভাব পরিলক্ষিত হলেও তাদের নিজস্ব যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে এগুলি অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র। বড়ুয়ারা এখন বাংলাদেশের এক উল্লেখযোগ্য সম্প্রদায়। বাংলাদেশের বড়ুয়ারা আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক বড়ুয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, আসামে, দিল্লী ও মুম্বাইতে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে, বার্মাতেও প্রচুর বড়ুয়া রয়েছে। এছাড়া এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বহু শহরেও বহু বড়ুয়া বৌদ্ধ সম্প্রদায় অনেক অগ্রসর এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধদের সামগ্রিক অগ্রগতিতে বড়ুয়া বৌদ্ধদের অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, শিল্প, সংগীত ও ক্রীড়ায় বড়ুয়াদের কৃতিত্ব সমগ্র বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের গর্ব। বড়ুয়াদের জাতীয় চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হল সরলতা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বাস, একতা, আতিথেয়তা ও দানশীলতা। এরা সাধারণত সমবেত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং দুর্যোগ ও বিপদের সময় ঐক্যবদ্ধ থাকে। বড়ুয়ারা আচরণে, কথাবার্তায় অত্যন্ত বিনয়ী এবং সংযমী। এদিক থেকে তারা সার্থক বৌদ্ধ। তারা অত্যন্ত বন্ধুবৎসল, একে অপরের যে কোন সাহায্যে এগিয়ে আসে। 


বাংলাদেশের বড়ুয়া সম্প্রদায়ের তরুণ- তরুণীরা এবং যুবক- যুবতীরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও নিজ ধর্ম, কৃষ্টি ও এতিহ্যের প্রতি কখনো আস্থা হারায়নি এটা অতীব গৌরবনীয় বিষয়। বড়ুয়ারা আজ উন্নত সম্প্রদায়, প্রকৃত বৌদ্ধাদর্শে প্রতিষ্ঠিত, সুমহান ঐতিহ্যের অধিকারী এবং উন্নতির পথে অগ্রসরমান। বৌদ্ধ পুরাকীর্তি, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ এ দেশের ঐতিহ্য ও গর্ব । ইহা প্রাচীন বাংলার নিদর্শন। আর এসব প্রাচীন পুরাকীর্তির পুরুষ পরম্পরা উত্তরসূরী হচ্ছে বাঙ্গালী বড়ুয়া বৌদ্ধ, যা এতক্ষণের আংশিক আলোচনায় আমরা নিঃসন্দেহে অবগত হয়েছি। তবে বর্তমানে কালের প্রেক্ষাপটে ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এই বড়ুয়া জাতি, তাদের পূর্বের ঐতিহ্য কতটুকু ধারণ করতে পাচ্ছে - তা বস্তুত প্রশ্নের সম্মুখীন। ইতিহাস জাতির সম্পদ। যে জাতির ইতিহাস নেই, সেই জাতির ঐহিত্য নেই। যে জাতি ইতিহাস জানে না সে জাতি আত্মভোলা জাতি। তাই কালের প্রেক্ষাপটে বৌদ্ধদের ইতিহাস সম্পর্কে সুগভীর জ্ঞান থাকা অতীব জরুরী। 


পরিশেষে, এই ক্ষুদ্র নিবন্ধে সকলের প্রতি বিশেষকরে আধুনিকতায় শিক্ষিত তরুণ বৌদ্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সেই ঐতিহ্য সম্পর্কে গভীর সজাগদৃষ্টি ও আত্ম সচেতনতা সৃষ্টির উদাত্ত আহবান জানাই।


রেফারেন্সঃ

১। বড়ুয়া বৌদ্ধদের আদিকথা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট,বোধিমিত্র বড়ুয়া, ২০১০; পৃ:০৬

২। বড়ুয়া জাতি, উমেশচন্দ্র মুৎসুদ্দি, ১৯৫৯; পৃ: ০৫

৩। বাংলা একাডেমী অভিধান, পৃ:৮২৪

৪। সদ্ধর্মের পুনরুত্থান, পণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির, ১৯৬৪; পৃ: ১৫-১৬

৫। বাঙ্গালী বৌদ্ধদের ইতিহাস ধর্ম ও সংস্কৃতি, ড.দীপংকর শ্রীজ্ঞান বড়ুয়া, ২০০৭; পৃ: ১১৯

৬। বাংলাদেশের বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতি, ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, পৃ :১৪৫ ও সদ্ধর্ম রত্নাকর, পণ্ডিত ধর্মতিলক স্থবির, পৃ:৪৩৯

৭। চট্টগ্রামের বৌদ্ধ জাতির ইতিহাস, নতুন চন্দ্র বড়ুয়া, ১৯৮৬; পৃ: ৩৫

৮। বাংলাদেশের বৌদ্ধধর্ম ও সংস্কৃতি, ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, প্রাগুক্ত, পৃ : ১৪৫

৯। বাঙ্গালী বৌদ্ধদের ইতিহাস ধর্ম ও সংস্কৃতি, প্রাগুক্ত, পৃ : ১১৭

১০। বাঙ্গালী বৌদ্ধদের ইতিহাস ধর্ম ও সংস্কৃতি,

প্রাগুক্ত, পৃ : ১২০।

১১। বাংলাদেশের বড়ুয়া জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সুনীতি রঞ্জন বড়ুয়া, ১৯৯৬;

পৃ: ১৮-১৯ ।

১২। বাংলাপিডিয়া http://bn.banglapedia.org/index.php...

১৩। এবং বিশেষ কৃতজ্ঞতা পূজনীয় জ্যোতি রক্ষিত ভিক্ষুকে।

বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে "অশোক স্তম্ভ"অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন ফ্রা.এইচ.মহিপাল থেরো

প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে "অশোক স্তম্ভ"অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন ফ্রা.এইচ.মহিপাল থেরো

 ঋদ্ধিময় নিউজ ডেক্স-

 কালের বিবর্তনে বাংলাদেশে বৌদ্ধদের সংখ্যা সিন্ধু থেকে বিন্দু'তে পরিনিত হয়েছে। এই বিন্দু থেকে সৃষ্টি হওয়া কিছু কিছু গৌরবনন্দিত সন্তান তাদের মেধা মমন প্রজ্ঞা শ্রম সাধনা আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশে এবং  বহির্বিশ্বে এমন কিছু গৌরবময় অর্জন বয়ে আনে যা আমাদের আনন্দে,উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত করে তোলে।

সেই নন্দিত সন্তাদের একজন ফ্রা এইচ মহিপাল থেরো মহোদয়। মহাকারুণিক তথাগত বুদ্ধের শাসন সদ্ধর্মের উন্নয়নে অবদানের জন্য বাংলাদেশীদের মধ্যে সর্ব প্রথম থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিকভাবে 'অশোক স্তম্ভ অ্যাওয়ার্ড' লাভ করতে যাচ্ছেন পরম কল্যামিত্র শ্রদ্ধেয় ফ্রা এইচ মহীপাল থেরো মহোদয়।                                                                                    আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার থাইল্যান্ডের                              ব্যাংককে অবস্হিত 'মহাচুলালংকারানরাজাবিদ্যালয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে' এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে। এই অ্যাওয়ার্ডে থাই রাজপরিবারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।                                                                               ফ্রা এইচ মহিপাল থেরো মহোদয় দীর্ঘদিন থাইল্যান্ডের বিখ্যাত ধম্মকায়া ফাউন্ডেশনে অবস্হান করে ধর্ম বিনয়ের উপর লেখা-পড়া করে বর্তমান অবধি সেখানে অবস্হান করে বিশ্বব্যাপী সদ্ধর্মের ধ্বজা উড়াচ্ছেন।                                                                                এইচ মহিপাল থেরো মহোদয় ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিহারে বড়-ছোট প্রায় দেড় শতাধিক বুদ্ধ প্রতিবিম্ব এনে দিয়ে এবং আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করে বাংলাদেশী বৌদ্ধদের প্রভূত উপকার সাধন করে যাচ্ছেন। তাঁর এই কল্যাণধারা চলমান রয়েছ। সদ্ধর্মের প্রচার-প্রচারে তিনি ইউরোপ আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।  

                                                   


                                                                                                                                                                     Venerable H Mahipal Thero of Bangladesh going to receive 'Ashoka Pillar Award' from Thailand for Moral Leadership and benefiting Buddhism. Wish your good health,peaceful and happiness life.Heartiest congratulations 

HMahipal Tharo.

অনলাইন ভিত্তিক ধর্মীয় প্রতিযোগিতার ফল প্রকাশ ও বৃত্তি প্রদান  অনুষ্ঠান সম্পন্ন।  -ঋদ্ধিময় নিউজ

অনলাইন ভিত্তিক ধর্মীয় প্রতিযোগিতার ফল প্রকাশ ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সম্পন্ন। -ঋদ্ধিময় নিউজ


ঋদ্ধিময় নিউজঃ

বাংলাদেশের তরুণ ভিক্ষুদের ধারা পরিচালিত বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট মঙ্ক সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত অনলাইন ভিত্তিক ধর্মীয় প্রতিযোগিতার ফল প্রকাশ ও বৃত্তি প্রদান  অনুষ্ঠান গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং রোজ শুক্রবার চট্টগ্রাম ঐতিহ্যবাহী চান্দঁগাও কেন্দ্রীয় সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারে সংগঠন এর সম্মানিত সভাপতি ভদন্ত ধর্মপ্রিয় থের মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। 



অনুষ্ঠানে আশীর্বাদক এর আসন অলঙ্কৃত করেন মহামান্য সংঘনায়ক অগ্গমহাপন্ডিত অধ্যাপক বনশ্রী মহাথের ও রাজগুরু ধর্মসেনাপতি অভয়ানন্দ মহাথের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ। 

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ মহিলা সমিতির সভাপতি মহাউপাসিকা লায়ন কেমি বড়ুয়া সহ প্রাজ্ঞ পন্ডিত পুজনীয় ভিক্ষুসংঘ ও জ্ঞানী গুণী উপাসক উপাসিকা বৃন্দ।

মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আমতলীতে সম্পন্ন হল প্রব্রজ্যা,উপসম্পদা, স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন।

আমতলীতে সম্পন্ন হল প্রব্রজ্যা,উপসম্পদা, স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন।

ঋদ্ধিময় নিউজঃ 

খাগড়াছড়ি গুইমারা উপজেলার আমতলী এলাকায় মহান প্রব্রজ্যাদান,উপস্পদা অনুষ্ঠান, স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন  রাজগুরু পন্ডিত উঃ সুমনা মহাস্থবির ভান্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। 


অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে সদ্ধর্মলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ও পালি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. জিনবোধি মহাথের। 

 প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি সাবেক চেয়ারম্যান কংজ্যরী চৌধুরী। এই বিশাল মহা অনুষ্ঠানে শত শত ভিক্ষু সংঘ ও হাজার হাজার ভক্তদের উপস্থিতিতে অত্র বিহারের অধ্যক্ষ উঃ কেসলা মহাস্থবিরের  প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী সাড়ম্ভরে উদযাপিত হয়েছে। তাঁরই প্রিয় শিষ্য কর্মবীর উঃ কোবিদা মহাস্থবিরের ব্যবস্হাপনায় গ্রামবাসী সহযোগিতায় এই জাতীয় বৌদ্ধ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

নতুন বছরে নতুন বই উপহার দিল "রত্নপ্রিয় প্রভাতী ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র"।

নতুন বছরে নতুন বই উপহার দিল "রত্নপ্রিয় প্রভাতী ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র"।

ঋদ্ধিময় নিউজঃ

সাতকানিয়া উপজেলাধীন ঐতিহ্যবাহী পূণ্যতীর্থ শীলঘাটা গ্রামের "রত্নপ্রিয় প্রভাতী ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রের"  উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন ধর্মীয় শিক্ষার বই বিতরণ করা হয়েছে।বই বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন ধর্মীয় গুরু সাতকানিয়া -লোহাগাড়া ভিক্ষু সমিতির পূজনীয় সভাপতি, শীলঘাটা পরিনির্বাণ বিহারের বিহারাধীপতি #শ্রীমৎ_রত্নপ্রিয়_মহাস্থবির।    অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন  শীলঘাটা গ্রামের কৃতি সন্তান, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সাবেক মহাসচিব, আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন  বৌদ্ধ ভিক্ষু #সদ্ধর্মকোবিদ_ভদন্ত_এস_লোকজিৎ_মহাথের মহোদয়।



শিক্ষার্থীদের মাঝ বই দান করেছেন প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত উপদেষ্টা বাবু বিকাশ বড়ুয়া , গ্রামের কৃতি সন্তান সাংঘিক বযক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় তিষ্যরত্ন ভিক্ষু।

পুজনীয় ভান্তেদের প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ও বন্দনা জ্ঞাপন করছি।


 অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল সম্মানিত উপদেষ্টা, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা, সভাপতি  স্বদেশ বড়ুয়া সহ  সকলের প্রতি  অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা  জ্ঞাপন করছি 🙏🙏🙏


ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনঃ

বাবু তিলক বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক, রত্নপ্রিয় প্রভাতী  ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র।

বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

নাইক্ষ্যছড়িতে সমাপ্ত হল ১০দিন ব্যাপী বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিবসব্রত (ওয়াইক)।

নাইক্ষ্যছড়িতে সমাপ্ত হল ১০দিন ব্যাপী বৌদ্ধ ভিক্ষু পরিবসব্রত (ওয়াইক)।



নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

বান্দরবান জেলার অন্তর্গত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তর ঘুমধুম বড়ুয়া পাড়ায় প্রতিষ্ঠিত ফরেস্ট মেডিটেশন সেন্টারে প্রতি বছরের ন্যায় গত ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে ১০ দিন ব্যাপী চলমান অনুষ্ঠানের আজ পরিসমাপ্তি হল ব্রহ্মচর্য জীবনের সর্বোউত্তম পন্থা পরিবাসব্রত (ওয়াইক)। 

গ্রামবাসী ও দুরদুরান্ত হতে আগত পুজারীবৃন্দ দের প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকারের দানকর্ম সম্পাদন করে আজ ১১ ফেব্রুয়ারী সহস্রাধিক উপাসক উপাসিকা দের উপস্থিতিতে সংঘদানের মাধ্যমে ১০দিন ব্যাপী পরিবাসব্রত ওয়াইক এর পরিসমাপ্তি হয়।

ওয়াইক পরিচালনা করেন সদ্ধর্মসিরি ভদন্ত কুশলায়ন মহাথের ও বিদর্শন সাধক ভদন্ত নন্দবংশ মহাথের।

পরিবাসব্রত ভিক্ষুর সংখ্যা ৫২ জন।