বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০২২

পালি উচ্চারণ প্রণালী



পালি ভাষা স্বয়ং ভগবান বুদ্ধের মুখে  ব্যবহৃত ভাষা। তাই এ ভাষা শিক্ষা ও উচ্চারণে অন্তরে গভীর শ্রদ্ধাভাব জাগ্রত রাখা একান্ত কর্তব্য।কারো নাম বিকৃত ভাবে উচ্চারণ যেমন দোষনীয় অপরাধ, অনুরূপভাবে পালি ভাষায় শিক্ষা ও উচ্চারণ অশুদ্ধ হওয়া অত্যন্ত গর্হিত এবং পাপের মধ্যেই গণ্য হয়। অধিকন্ত অশুদ্ধ উচ্চারণের কারণে শুদ্ধ পরিত্রাণাদিসহ ভিক্ষুদের বিনয় কর্মবাক্যের বিশুদ্ধিতা নষ্ট হয়, এদের গুণধর্মও নষ্ট হয়। তাই অতি সাবধানে অত্যন্ত নিখুঁত ও বিশুদ্ধভাবেই পালি ভাষার শিক্ষা ও উচ্চারণ প্রণালী শিক্ষা করা একান্ত কর্তব্য। 
Phonetics তথা ধ্বনিতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে সংস্কৃত বর্ণমালার স্বর ব্যঞ্জন সমূহের বিভাজন ও উচ্চারণ প্রণালী অবৈজ্ঞানিক। বর্তমান বাংলা ভাষার জননী পালি ভাষা হলেও পরবর্তীকালে তাহা সংস্কৃত ভাষা প্রভাবিত শিক্ষার কারণে ধ্বনিতাত্ত্বিক বিধান লঙ্ঘিত উচ্চারণের শিকার হয়ে পড়েছে। বাংলা ভাষাভাষি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পালি পন্ডিতগণ এ-ই বিদ্রান্তির শিকার হয়েই পালি ভাষাকে  সংস্কৃত নিয়মে ভুল উচ্চারণ শিক্ষা দিয়ে  থাকেন। এটা মম্তবড় অন্যায় ও পাপ।যেমন ধরুন, বাংলা স্বরবর্ণমালা শিক্ষায় যদি এভাবে উচ্চারণ করা হয়-স্বরে অ,স্বরে আ; এজাতীয় উচ্চারণ ধ্বনিতাত্ত্বিক নিয়মে একান্তই ভুল। এদের প্রকৃত উচ্চারণ হবে - হ্রস্ব আ,দীর্ঘ আ।যেমন বলা হয়ে হ্রস্ব-ই,দীর্ঘ -ই, হ্রস্ব - উ,  দীর্ঘ -উ। এটাই ধ্বনিতাত্ত্বিক নিয়ম এবং শুদ্ধ উচ্চারণ। পালি বর্ণমালা সমূহ এই নিয়ম মেনে চলার কারণেই এদের স্বরবর্ণের সর্মমোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮টি ;যথা-- হ্রস্ব- আ,দীর্ঘ -আ, হ্রস্ব -ই, দীর্ঘ -ই,  হ্রস্ব- উ, দীর্ঘ -উ ,  এ, ও ইত্যাদি। বাংলা স্বরবর্ণের - ঔ (অ+উ), ঐ (অ+ই),  এ-ই দ্বিস্বরদ্বয় এবং ঋ (র+ই) এই স্বরব্যঞ্জন  বর্ণটি বাংলা ভাষার অপ্রচলিত ৯ (রী) বর্ণটি পালিতে ধ্বনিতাত্ত্বিক নিয়মে অপ্রয়োজনীয় বিধান বাদ পড়েছে। বাংলা বর্ণমালায় এ সকল বর্ণের অন্তর্ভূক্তি  একান্তই অবৈজ্ঞানিক এবং প্রভাবিত।আমরা জানি যে,ব্যঞ্জনবর্ণসমূহ স্বরবর্ণের সাহায্য নিয়েই উচ্চারিত হয়। আরও সেই স্বরবর্ণটি হচ্ছে - স্বরবর্ণমালার প্রথম বর্ণ হ্র-আ। বাংলা বর্ণমালা সংস্কৃত বর্ণমালার চেহারায় লিখিত হাওয়ার কারণেই বাংলা লিখিত ব্যঞ্জনবর্ণসমূহ উক্ত স্বরবর্ণটি লুপ্ত অবস্থায় চলে গেছে। যেমন ক,গ,চ ইত্যাদি। অথচ উচ্চারণকালে আমরা বলে থাকি- ক+অ =ক, গ+অ=গ। ইংরেজি বর্ণমালায় কিন্তু এমন বিদ্রান্তি নেই। যেমন --Ka, Ga, Ca- ইত্যাদি। নিম্নে বর্ণিত ধ্বনিতাত্ত্বিক এবং বৈজ্ঞানিক নিয়মে পালি বর্ণমালার বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও বানান পদ্ধতি তাই অত্যন্ত বিশুদ্ধ নির্ভুল বলেই প্রমাণিত।আর একারণেই পালি স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারিত হতে হবে নিম্নোক্ত প্রণালীতে--একইভাবে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণমালায় বর্গীয় - ব ba ওষ্ঠজ বর্গীয় ব,- bh - ভ, v দন্ত ওষ্ঠজ অবর্গীয় ব - এই বর্ণ সমূহ পৃথকভাবে লিখা যায়।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: